চট্টগ্রামের আঞ্চলিক ভাষা চাটগাঁবাসীর মায়ের ভাষা। এ ভাষা আজ বিলুপ্তির পথে। এর জন্য আমরা চাটগাঁবাসীই দায়ি। বাংলাদেশ একাধিক আঞ্চলিক ভাষার দেশ। বিভাগ জেলা ও অঞ্চল ভিত্তিক রয়েছে অনেক আঞ্চলিক ভাষার প্রকারভেদ। চাটগাঁর আঞ্চলিক ভাষার বৈশিষ্ট্য ঐতিহ্য ও সংস্কৃতিই আলাদা। এ ভাষায় ইতিহাস অনেক সমৃদ্ধ। আরবি, ফার্সি, বাংলাবৌদ্ধ মঘী, আরকানী ইত্যাদি ভাষার সংমিশ্রণে চাটগাঁর আঞ্চলিক ভাষার উচ্চারণ ও কথোপকথন আবাহ্ সৃষ্টির মাধ্যমে আন্তরিকতার বহি:প্রকাশ ও সুন্দর সাবলীল বাচন ভঙ্গী ফুটে উঠে। বর্তমান প্রজন্মের কাছে এ ভাষা গেঁয়ো ভাষা বলে বিবেচিত হচ্ছে এবং আমরাও আমাদের সন্তানদের কোন অবস্থায় চাটগাঁর আঞ্চলিক ভাষার কথা বলতে উৎসাহ দিচ্ছি না। কোন কারণে শিশুদের মুখ থেকে আঞ্চলিক শব্দ বের হলে তাকে শোধরীরে দেয়া হচ্ছে। অথচ অনেক বিদেশিদের কাছে এ ভাষার যথেষ্ট কদর রয়েছে এবং অনেকে তা রপ্ত করতে চেষ্টা করে। আধুনিকতার ছোঁয়ায় চাটগাঁবাসী আঞ্চলিক ভাষার ঐতিহ্য মুছে ফেলার কৌশল অবলম্বন করছে। ক্রমে চাটগাঁ ভাষার স্মৃতি স্বরূপ সংলক্ষণাগারে স্থান পাবে। আজ গ্রামে-গঞ্চে ও মায়েরা শিশুদের আঞ্চলিক ভাষায় বুলি ফোটায় না, শহরে তো প্রশ্নই আসে না। আঞ্চলিক ভাষায় কথা বললে তা কেমন জানি বেমানান ও বেখাপ্পা লাগে। আধুনিক সাজতে গিয়ে আমরা এ ভাষাকে সম্পূর্ণ এড়িয়ে চলি। আমাদের শিক্ষা ব্যবস্থায় চাটগাঁর আঞ্চলিক ভাষার চর্চা বিষয়ক পাঠ্য রাখা কর্তব্য। অনাভ্যাসে পৃথিবীর অনেক ভাষাই বিলুপ্ত হয়ে গেছে। চাটগাঁর আঞ্চলিক ভাষার কথা গান কবিতা নাটক কৌতুক ভিন দেশি ভিন ভাষীদের কাছে জনপ্রিয় তেমনি এ দেশেও রয়েছে বিপুল চাহিদা। চাটগাঁবাসীর এমন এক বৈশিষ্ট্য রয়েছে পৃথিবীর যেকোন ভাষা এরা সহজে আয়ত্ব করতে পারে। কিন্তু চাটগাঁর আঞ্চলিক ভাষা অন্য দেশ বা জেলার মানুষ সহজে শিখতে পারে না। পৃথিবীর অনেক দেশে অনেক অঞ্চলে অধিবাসীরা নিজ মাতৃভাষায় বা আঞ্চলিক ভাষায় কথা বলে ইহা তাদের জন্য গর্ব বা গৌরবের। অন্যকে সন্তুষ্ট করতে নিজের ভাষাকে পরিবর্তন করার মানসিকতা আত্মমর্যাদা বর্জিত। সম্প্রতি চাটগাঁ ভাষা পরিষদের উদ্যোগে চাটগাঁ ভাষার উন্নয়ন সংরক্ষণ ও স্বীকৃতি বিষয়ক যে সেমিনার করা হয়েছে এর মাধ্যমে চাটগাঁ ভাষার ব্যাপক ব্যবহার ও প্রচলনের প্রসার ঘটাতে হবে এবং এ বিষয়ে চাটগাঁবাসীর মানসিকতা পরিবর্তন করে তাদেরকেই ভূমিকা রাখতে হবে।
No comments:
Post a Comment